যশোর জেলা শহরের উত্তরে নবনগরী উপশহর সংলগ্ন ঘোপ এলাকার প্রশস্ত চত্তরে এক মুক্ত মনোরম পরিবেশে ১৯৬৩ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় যশোর জুনিয়র ট্রেনিং কলেজ ।
যশোর, ফেনী ও ময়মনসিংহে ১৯৬৩ সালের জুলাই মাসে ৩টি জুনিয়র ট্রেনিং কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয় । এই কলেজগুলি সরকারী ও আবাসিক । ইহার প্রথম দু’বছর অর্থাৎ ১৯৬৩ ও ১৯৬৪ সালে প্রশিক্ষণ কাল ছিল ১ বছর অর্থাৎ ইংরেজী বছরের জুলাই ১ বছর অর্থাৎ ইংরেজি বছরের জুলাই ১লা থেকে শুরু করে ৩০ শে জুন পর্যন্ত। মাধ্যমিক পরীক্ষায় পাশ বা ইহার সমমান সম্পন্ন প্রার্থীরা এখানে ভর্তি হওয়ার উপযোগী বলে বিবেচিত হতো। শিক্ষক প্রশিক্ষণ ও উচ্চ মাধ্যমিক পাঠক্রমের আংশিক মিশ্রণে এই প্রশিক্ষণ কোর্স চালু ছিল । স্কুলে কর্মরত শিক্ষক-শিক্ষিকা ও বহিরাগত প্রার্থী উভয়েই এখানে প্রশিক্ষণের সুযোগ পেত। ছাত্রছাত্রীদের স্টাইপেন্ড দেওয়ার ব্যবস্থাও ছিল । তাত্ত্বিক ও ব্যবহারিক পাঠ্যসূচীর অন্তর্ভূক্ত ছিল । সকল প্রশিক্ষণার্থীকে অন্ততঃ ৩ মাস অনুশীলনী পাঠদানের জন্য কলেজের নিকটবর্তী প্রাথমিক ও নিম্নমাধ্যমিক বিদ্যালয় সমূহে উপস্থিত হতে হতো । ১ বছর অন্তে যে সকল ছাত্র-ছাত্রী কলেজের সমাপনী পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতো তারা কলেজ থেকে উচ্চতর শিক্ষার সনদপত্র বা হায়ার সার্টিফিকেট ইন-এডুকেশন পেত । বিভাগীয় জনশিক্ষা পরিচালকের নিয়ন্ত্রণে কলেজের মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয় এই সনদপত্র প্রদান করতেন । তবে উল্লেখ্য, এই সনদপত্র তদানিন্তন মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড কর্তৃক প্রদত্ত উচ্চ মাধ্যমিক সনদপত্রের সমমানের ছিল না।
১৯৬৫ সালে যশোর জুনিয়র ট্রেনিং কলেজসহ বাংলাদেশের মোট ৬টি জুনিয়র ট্রেনিং কলেজ শিক্ষা বোর্ডের উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে দুই বৎসর ব্যাপী উচ্চ মাধ্যমিক পাঠ্যক্রমের সংগে শিক্ষার তাত্ত্বিক ও ব্যবহারিক বিষয়াদি যুক্ত করে এক পূর্ণাংগ উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা কোর্স চালু করা হয় । এখানেও শিক্ষার্থীদের জন্য অনুশীলনী পাঠদানের ব্যবস্থা ছিল । ২ বছর অন্তে বোর্ডের নিয়ন্ত্রণে চূড়ান্ত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হতো । কৃতকার্য ছাত্র-ছাত্রীরা স্কুলসমূহে শিক্ষক শিক্ষিকা হওয়ার যোগ্যতা প্রাপ্ত হতো এবং তাদের প্রাপ্ত সনদপত্রের মান উচ্চ মাধ্যমিক সাধারণ সনদপত্রের মান এর সমতুল্য ছিল । মাধ্যমিক পরীক্ষায় পাশ বা তার সমমানের প্রার্থীরা এখানে ভর্তি হওয়ার যোগ্য বলে বিবেচিত হতো । ১৯৭২ সাল পর্যন্ত এই কোর্স চালু ছিল । এই কলেজের শিক্ষক-শিক্ষিকারা অন্য যে কোন সরকারী কলেজের শিক্ষক-শিক্ষিকাদের সমপর্যায়ের ছিলেন ।
১৯৭২ সালের জুলাই মাস থেকে যশোর জুনিয়র ট্রেনিং কলেজকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন কলেজ অব এডুকেশনে উন্নীত করা হয় । কলেজ অব এডুকেশন শিক্ষক প্রশিক্ষণের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ সরকারের একটি উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ । শিক্ষক প্রশিক্ষণের ক্ষেত্রে ইহাকে একটি নতুন পরীক্ষামূলক পদক্ষেপও বলা চলে । এই নতুন পরীক্ষামূলক প্রশিক্ষণের শিক্ষাকাল ছিল ৩ বছর । যে সকল ছাত্র-ছাত্রী ৩ বছর অন্তে এই কলেজ থেকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাপনী পরীক্ষায় কৃতকার্যতা লাভ করতো , তারা বি,এ,ইন-এডুকেশন ডিগ্রী প্রাপ্ত হতো । চাকুরী ও উচ্চ শিক্ষার ক্ষেত্রে এই ডিগ্রী ছিল বি.এ.বি.এড ডিগ্রীর সমতুল্য । উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় বিভিন্ন বিভাগে, যেমন মানবিক, বিজ্ঞান, বা্ণিজ্য, শিক্ষা ইত্যাদিতে কমপক্ষে দ্বিতীয় বিভাগে উত্তীর্ণ ছাত্র-ছাত্রীরাই এই কলেজে ভর্তি হওয়ার উপযুক্ত বলে বিবেচিত হতো । ছাত্র-ছাত্রীদেরকে অধ্যয়নকালে প্রতিমাসে ৮৫/= টাকা করে স্টাইপেন্ড দেওয়া হতো । বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক কলেজটি একটি আলাদা ইউনিট বলে বিবেচিত হতো তবে ছাত্র সংখ্যা অত্যন্ত কম ছিল এবং বিজ্ঞান ও বাণিজ্য বিভাগের শিক্ষক শিক্ষিকাদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার কোন ব্যবস্থা ছিল না ।
পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে: মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, এটুআই, বিসিসি, ডিওআইসিটি ও বেসিস